সোমবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২৫
27 Jan 2025 06:09 pm
হাসিনা লীগ শব্দটি আমার নয়,এটি মাঠে এনেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী। তিনি এক টক শ'তে বলেন- হাসিনা লীগের বিলুপ্তি ঘটবে, আওয়ামী লীগের নয়।আওয়ামী লীগ আবার জেগে উঠবে। আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন। সভাপতি ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও সেক্রেটারি ছিলেন সামসুল হক এবং দপ্তর সম্পাদক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। পরে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের আগে দলের নাম থেকে 'মুসলিম' শব্দটি কেটে দলটি অসাম্প্রদায়িক করা হয়।এখন দেখা যাক কীভাবে আওয়ামী লীগ হাসিনা লীগে পরিণত হলো।আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
সংগ্রাম ছাড়া আওয়ামী লীগ কখনো ক্ষমতায় আসেনি। এ দলটির যতো বদনাম, তা স্বাধীনতা পরবর্তী। কাদের সিদ্দিকীর বয়ানে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যুক্তফ্রন্টের সময় জুনিয়র মন্ত্রী থাকাকালে দল থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। অথচ তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা এক সাথে তিন পদ দখলে রেখেছিলেন। তিনি( কাদের সিদ্দিকী) নিজের ব্যর্থতার কথা একবারও স্বীকার করেন নি। তিনি কি কখনো বঙ্গবন্ধুকে সঠিক পরামর্শ দিয়েছিলেন কিংবা তাঁর পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছিলেন? অনেকে মনে করেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর বড় ব্যর্থতা গণতন্ত্র না দেয়া। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলে সশস্ত্র যুদ্ধোত্তর দেশে প্রথমে কখনো গণতন্ত্র আসেনা। পাকিস্তান সহ অ্যারাবিয়ান দেশগুলো তার বড় প্রমাণ। সেজন্য বলা উচিত স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধুর উচিত ছিল কঠোর একনায়কতন্ত্র কিংবা বাকশাল কায়েম করা। উদার একনায়করা নিজে সৎ থাকেন, দলকে দুর্নীতিমুক্ত রাখেন এবং আত্মীয়-স্বজনকে দল থেকে দুরে রাখেন। এ বিষয়ে তাজউদ্দীন ছাড়া কারোর দার্শনিক দূরদর্শীতা ছিল না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভাগ্নে-ভাতিজা ও তোষামোদকারী কর্তৃক পরিবেষ্টিত হয়ে পড়েন। তিনি একসময় উপলব্ধি করেন দলকে কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। ততক্ষণে যা সর্বনাশ হওয়ার কথা, তা হয়ে গেছে। শেখ মুজিব ১৯৭৪ সালে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য বিশেষ অভিযানের নির্দেশ দেন (তাঁর ভাষায় লাল ঘোড়া দাবড়িয়ে দেয়া হবে) । এতে আওয়ামী লীগের লোকজনই বেশি পিটুনি খায়। জাসদ ও সর্বহারা পার্টির নেতা কর্মীরা পলাতক থাকায় তুলনামূলক কম ধরা পড়ে; যদিও এর আগে তারা রক্ষীবাহিনীর হাতে নির্যাতিত হন বেশি । যা হোক, শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন।
মনোবিজ্ঞান বলে- যে ব্যক্তি স্মৃতিকাতর থাকেন, সে ব্যক্তি একটি বৃত্তে ঘুরপাক খেতে থাকেন। শেখ হাসিনার বেলায় উদাহরণটি খাটে।তিনি সকল বক্তৃতায় পরিবারের সদস্যদের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি বলতেন। তিনি ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে ৭৫ এর হত্যাকাণ্ডের বিচার করেন।অনেকে আশা করেছিলেন, এবার বোধহয় এ পর্বের সমাপ্তি ঘটবে। ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলার ঘটনাটি আবার তাকে উদ্দীপক দ্বারা তাড়িত থাকার মনস্তত্ব সরবরাহ করে।তিনি মুখে গণতন্ত্রের কথা বলেছেন, বাস্তবে ১৩ বছর একনায়কতান্ত্রিক ভাবে দেশ চালিয়েছেন।এখানে মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদের উদাহরণ দেয়া যেতে পারে।তিনি কঠোর হস্তে বিরোধী দলকে দমন করে দেশকে উন্নয়নের শীর্ষে নিয়ে গেছেন।তিনি নিজে সৎ থেকেছেন,মন্ত্রী পরিষদকে সৎ থাকতে বাধ্য করেছেন এবং পরিবারকে রাজনীতির বাইরে রেখেছেন।ফলে মাহাথির মোহাম্মদ একজনই থেকেছেন।এদেশে এর বিপরীত ঘটনা ঘটে।
শেখ হাসিনাসহ সকল আত্মীয়-স্বজন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।তাদের দেখাদেখি দেশের সকল স্তরে নেতাকর্মীরাও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ফলে একজন হাসিনার থেকে হাজার হাজার হাসিনার জন্ম ঘটে।দলের নাম হয়ে পড়ে হাসিনা লীগ।প্রথমে বলা হয়েছে -সংগ্রাম ছাড়া আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাওয়ার ইতিহাস নেই।সংগ্রাম করতে হলে নৈতিক শক্তির প্রয়োজন পড়ে।হাসিনা লীগ সেই শক্তি হারিয়েছে বহু আগে।
লেখক:গণতন্ত্রায়ন ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার বিষয়ক গবেষক।